মচমচে পেয়াজু ভাজা: বৃষ্টিভেজা বিকেলের পারফেক্ট নাস্তা।
ভূমিকা:
বিকেল মানেই যেন এক কাপ চা আর হালকা কিছু মুখরোচক খাবার। বিশেষ করে বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়াতে বা শীতের হিমেল সন্ধ্যায় পেয়াজু ভাজা যেন এক অনন্য স্বাদ নিয়ে হাজির হয়। এ সময় এক কাপ ধোঁয়া উঠা চা আর সাথে গরম গরম পেয়াজু ভাজা খাওয়ার মজাই আলাদা। আমরা বাঙালিরা রমজান মাসে ইফতারে পেয়াজু খেতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। তবে শুধু রোজার সময় নয়, ইচ্ছা করলেই বছরের যেকোনো সময় এই টেস্টি স্ন্যাক্সটি বানিয়ে নিতে পারেন। এমনকি পানতা ভাতের সাথে পেলেও এর স্বাদ দ্বিগুণ হয়ে যায়, যদিও এটা একান্তই ব্যাক্তিগত পছন্দের বিষয়।
তবে সবাই পেলেও মচমচে ও পারফেক্ট ক্রিস্পি পেয়াজু ভাজা বানাতে পারে না। আজ আমরা জানবো কীভাবে খুব সহজে বাড়িতে বানিয়ে নিতে পারবেন দোকানের মতো ক্রিস্পি ও সুস্বাদু পেয়াজু ভাজা।
উৎপত্তি ও জনপ্রিয়তা:
পেয়াজু মূলত বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি নাস্তা। এটি বিশেষভাবে রোজার মাসে ইফতারির সময় প্রায় প্রতিটি ঘরে বানানো হয়। পেয়াজু বলতে আমরা বুঝি মূলত পেঁয়াজ আর ডাল একত্র করে তৈরি করা ভাজা আইটেম। তবে অঞ্চলভেদে এতে নানা ধরনের উপাদান যোগ করে স্বাদে আনা হয় ভিন্নতা। সময়ের সাথে সাথে এই সাধারণ খাবারটি হয়ে উঠেছে আমাদের রোজকার জীবনের বিশেষ অংশ।
পেয়াজু খাওয়ার কারণ ও উপকারিতা:
- সহজলভ্য উপকরণে তৈরি।
- ডাল, পেঁয়াজ ও মশলার সংমিশ্রণে স্বাদে অনন্য।
- শীতকাল বা বর্ষাকালে চায়ের সাথে চমৎকার যায়।
- শিশু থেকে বৃদ্ধ, সবার প্রিয় একটি আইটেম।
- অতিথি আপ্যায়নেও ব্যবহারযোগ্য।

উপকরণ তালিকা:
- মুসুর ডালের বাটা – ১ কাপ
- চালের গুঁড়া – ২ থেকে ৩ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
- কাঁচামরিচ কুচি – ৪ থেকে ৫টি
- আদা বাটা – ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া – ১/২ চা চামচ
- লবণ – পরিমাণমতো
- ধনে পাতা কুচি – ২ টেবিল চামচ
- কর্ণ ফ্লাওয়ার – ১/২ টেবিল চামচ
প্রস্তুত প্রণালী (ধাপে ধাপে):
১. ডাল ভিজানো:
প্রথমেই মুসুর ডাল ৫–৬ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে ডাল নরম হবে এবং সহজে বাটা যাবে।
- ডাল বাটা:
ডাল থেকে পানি ঝরিয়ে ভালোভাবে পাটায় বা ব্লেন্ডারে বেটে নিন। তবে অতিরিক্ত মিহি করবেন না, হালকা দানাদানা থাকলে ভাজার সময় ভালো টেক্সচার পাবেন। - মিশ্রণ তৈরি:
বাটানো ডালে পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ, আদা বাটা, হলুদ, মরিচ, ধনে গুঁড়া, লবণ, চালের গুঁড়া, কর্ণ ফ্লাওয়ার ও ধনে পাতা একসাথে দিয়ে হাতে ভালো করে মেখে নিন। চাইলে হাতেই মেশান, এতে করে মিশ্রণটা একদম পারফেক্ট হয়। - তেল গরম করা:
এবার করাই বা ফ্রাইং প্যানে পরিমাণমতো তেল গরম করুন। তেল ভালো করে গরম হলে চুলার আঁচ কমিয়ে দিন। - ভাজা:
এবার মিশ্রণ থেকে ছোট ছোট বল বা টিকার মতো আকার দিয়ে গরম তেলে ছেড়ে দিন। একদিকে ভালোভাবে ভাজা না হওয়া পর্যন্ত নাড়াচাড়া করবেন না। এতে করে পেয়াজু ভেঙে যেতে পারে। - উল্টে দেওয়া:
একদিক হয়ে গেলে সাবধানে উল্টে অন্যদিকও ভাজুন। দুইপাশ সোনালি রঙ ধারণ করলে তেল থেকে তুলে কিচেন টিস্যুর উপর রাখুন। - পরিবেশন:
গরম গরম পেয়াজু পরিবেশন করুন শশা-পেঁয়াজ সালাদ, টমেটো সস বা চাটনির সাথে।
পরিবেশনের আইডিয়া:
- এক কাপ গরম চায়ের সাথে বিকালের নাস্তায়
- ইফতারে বেগুনি, ছোলা, খেজুরের সাথে
- পানতা ভাতের সাথে একেবারে ভিন্ন স্বাদে
- পুদিনা চাটনির সাথে অতিথি আপ্যায়নে
কোথায় ব্যবহার করবেন:
- বিকেলের নাস্তা বা সকালের ব্রেকফাস্টে
- স্কুল/অফিস টিফিনে
- ঘরে ছোটখাটো আয়োজন বা অতিথি আপ্যায়নে
- বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বিকল্প
প্রশ্নোত্তর (FAQ):
Q: পেয়াজু বেশি নরম হয়ে যায় কেন?
A: ডালের বাটা যদি খুব বেশি পানি দিয়ে তৈরি করা হয়, তাহলে পেয়াজু নরম হয়ে যায়। পানি কম ব্যবহার করুন।
Q: চালের গুঁড়া ব্যবহার না করলেও হবে?
A: চালের গুঁড়া না থাকলেও চাল ভিজিয়ে বেটে নিতে পারেন। এটি পেয়াজুকে মচমচে করে তোলে।
Q: ডিপ ফ্রাই না করে এয়ার ফ্রাইয়ে করা যাবে?
A: হ্যাঁ, তবে একটু তেল ব্রাশ করে দিন। সময় একটু বেশি লাগতে পারে।
টিপসঃ
- চালের পরিবর্তে সামান্য পোলাও চাল ভিজিয়ে বাটলেও স্বাদ ভালো হয়।
- একটি মাঝারি সাইজের আলু কুচি করে মিশালে পাকোড়ার মতো স্বাদ পাওয়া যায়।
- পুদিনা পাতা কুচি করে দিলে ঘ্রাণ ও স্বাদে আসে দারুণ বৈচিত্র্য।
- ভাজার সময় আঁচ খুব বেশি দিলে বাইরে পুড়ে যাবে, ভিতর কাঁচা থেকে যাবে। তাই মাঝারি আঁচে ধৈর্য ধরে ভাজুন।

উপসংহারঃ
মচমচে পেয়াজু ভাজা শুধু একটি সাধারণ খাবার নয়, এটি একান্তভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ ও ঐতিহ্যের সাথে। এক কাপ চায়ের সাথে পেয়াজুর সেই হালকা ঝাল স্বাদ যেন ক্লান্ত দুপুরের পর একধরনের প্রশান্তি এনে দেয়। আজকের রেসিপি অনুসরণ করে আপনি খুব সহজেই বাড়িতে বানিয়ে ফেলতে পারেন এই সুস্বাদু এবং ক্রিস্পি পেয়াজু। তাহলে আর দেরি কেন? বৃষ্টি হোক বা শীত – চা আর পেয়াজু থাকলেই বিকেলটা হয়ে উঠবে একদম জমজমাট!
এই রেসিপিটি কেমন লাগলো জানাতে ভুলবেন না। চাইলে আরো এমন রেসিপির জন্য ফলো করুন আমাদের ব্লগ!
আরও রেসিপি চাই? আমি রেডি আছি! 😊
Would you like an English version of this recipe as well?