“কোশারি রেসিপি: মিশরের ঐতিহ্যবাহী জাতীয় খাবার ঘরেই বানানোর সহজ উপায়”
ভূমিকা
মিশর ভ্রমণের কথা বললে পিরামিড, নীলনদ আর ঐতিহাসিক স্থাপনার পাশাপাশি খাবারের কথাও উঠে আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং জাতীয় খাবার হলো কোশারি (Koshari)। ভাত, ডাল, ছোলা, পাস্তা, টক ঝাল টমেটো সস আর ভাজা পেঁয়াজের সমন্বয়ে এই খাবার তৈরি হয়। কোশারি শুধু একটি খাবার নয়, বরং মিশরীয় সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
উৎপত্তি

কোশারির উৎপত্তি মিশরে হলেও এর ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রান্নার প্রভাব। ব্রিটিশরা মিশরে শাসনকালে ভাত ও ডাল জনপ্রিয় করে তোলে, ইতালিয়ানরা পাস্তা পরিচিত করায়, আর ভারতীয় রান্না থেকে আসে ডালের ব্যবহার। এভাবে ধীরে ধীরে কোশারি তৈরি হয় একটি ফিউশন খাবার হিসেবে, যা আজ মিশরের জাতীয় খাবার।
কেন খাবারটি খাওয়া উচিত (Reasons to Try)
- স্বাদের বৈচিত্র্য – ঝাল, টক, মচমচে ও নরম সবকিছুর মিশ্রণ।
- পুষ্টিগুণে ভরপুর – ডাল ও ছোলা প্রোটিন সরবরাহ করে, ভাত ও পাস্তা শক্তি দেয়।
- শাকাহারীদের জন্য পারফেক্ট – এতে মাংস ব্যবহার হয় না, কিন্তু পেট ভরে যায়।
- সহজে তৈরি করা যায় – সাধারণ উপকরণ দিয়েই বানানো সম্ভব।
- সংস্কৃতির স্বাদ – ঘরে বসেই মিশরের ঐতিহ্য উপভোগ করা যায়।
পূর্ণ রেসিপি (Ingredients & Instructions)
উপকরণ:
- চাল– ২ কাপ
- ব্রাউন ডাল – ১ কাপ ( মসুরের খোসাসহ আস্ত ডাল )
- ছোলা – ১ কাপ (সেদ্ধ)
- পাস্তা – ১ কাপ
- টমেটো – ৪-৫টি
- রসুন – ৫ কোয়া
- পেঁয়াজ – ২টি বড় (পাতলা কাটা)
- টমেটো পেস্ট – ২ টেবিল চামচ
- ভিনেগার – ২ টেবিল চামচ
- লবণ – স্বাদমতো
- শুকনা মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- জিরা গুড়া – ১ চা চামচ
- ধনিয় গুড়া – ১ চা চামচ
- গোলমরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
- ভেজিটেবল অয়েল – ৪-৫ টেবিল চামচ

প্রস্তুত প্রণালি (Instructions):
ধাপ ১: ভাত রান্না
– ভাত ধুয়ে লবণ দিয়ে সিদ্ধ করুন এবং আলাদা করে রাখুন।
ধাপ ২: ডাল সেদ্ধ
– ব্রাউন ডাল পানিতে ভালোভাবে সেদ্ধ করুন কিন্তু একেবারে নরম না হয়।
ধাপ ৩: পাস্তা সেদ্ধ
– পাস্তা লবণ দেওয়া পানিতে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে নিন।
ধাপ ৪: টমেটো সস
– টমেটো, রসুন ও টমেটো পেস্ট একসাথে ব্লেন্ড করুন।
– একটি প্যানে তেল গরম করে মিশ্রণটি দিন।
– ভিনেগার, জিরা, ধনিয়া, মরিচ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে ঝোল ঘন হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।
ধাপ ৫: ভাজা পেঁয়াজ
– পেঁয়াজ পাতলা কেটে তেলে ভেজে মচমচে করে নিন।
ধাপ ৬: সবকিছু সাজানো
– একটি বড় বাটিতে প্রথমে ভাত দিন।
– তার উপর ডাল, ছোলা ও পাস্তা স্তরে স্তরে দিন।
– টমেটো সস ঢালুন।
– উপর থেকে ভাজা পেঁয়াজ ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

পরিবেশনের আইডিয়া (Serving Ideas)
- গরম অবস্থায় খাওয়া সবচেয়ে ভালো।
- সাথে আচার বা সালাদ পরিবেশন করতে পারেন।
- ঠান্ডা পানীয় বা লেবুর শরবতের সাথে খেতে দারুণ লাগে।
ব্যবহার (Uses)
– লাঞ্চ বা ডিনার দু’সময়েই পরিবেশন করা যায়।
– পারিবারিক জমায়েত বা অতিথি আপ্যায়নে দারুণ একটি রেসিপি।
প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন ১: কোশারিতে মাংস দেওয়া যায় কি?
👉 মূলত এটি নিরামিষ খাবার, তবে চাইলে গ্রিল চিকেন বা মাংস আলাদাভাবে পরিবেশন করা যায়।
প্রশ্ন ২: কোন ডাল সবচেয়ে ভালো মানায়?
👉 ব্রাউন ডাল বা মসুর ডাল সবচেয়ে উপযুক্ত।
প্রশ্ন ৩: এটি কি ফ্রিজে রাখা যায়?
👉 হ্যাঁ, তবে আলাদা আলাদা কনটেইনারে ভাত, ডাল, সস ও পাস্তা সংরক্ষণ করলে ভালো থাকে।
টিপস
- পেঁয়াজ খুব বেশি নাড়াচাড়া না করে ভাজলে সমানভাবে লাল হবে।
- টমেটো সসে ভিনেগার দিলে আসল স্বাদ পাওয়া যায়।
- চাইলে সামান্য লাল মরিচের তেল ব্যবহার করে বাড়তি ঝাল দিতে পারেন।

উপসংহার
কোশারি হলো একটি ঐতিহ্যবাহী মিশরীয় খাবার যা শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবে পরিচিত। সাধারণ উপকরণে তৈরি হলেও এর স্বাদ অসাধারণ। একবার ঘরে চেষ্টা করে দেখলে বুঝবেন কেন এটি মিশরের জাতীয় খাবার হিসেবে এত জনপ্রিয়।