পেশোয়ারি মাংস রেসিপি!

Peshawari meat recipe

আসল পশতু খাবার – পেশোয়ারি মাংস (রোশ/নমকিন গোশত) রেসিপি

ভূমিকা

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া অঞ্চলের খাবারের নাম শুনলেই প্রথমে যে ডিশটির কথা মনে পড়ে সেটি হলো পেশোয়ারি রোশ বা নমকিন গোশত। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী পশতু খাবার, যেখানে মাংসের স্বাদকেই প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হয়। অন্য অনেক কারির মতো অতিরিক্ত মসলা ব্যবহার করা হয় না। বরং অল্প কিছু সহজ উপকরণ দিয়েই তৈরি হয় এই সুস্বাদু খাবার। মাংসের আসল স্বাদ, ঘ্রাণ আর কোমলতা ধরে রাখাই এর বিশেষত্ব।

 পেশোয়ারি মাংস
পেশোয়ারি মাংস

উৎপত্তি

পেশোয়ারি রোশের উৎপত্তি পাকিস্তানের  পেশোয়ার শহর থেকে, যা পশতুন সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র। ঐতিহ্যগতভাবে পশতুন পরিবারগুলো মাংস রান্না করত অল্প মসলা দিয়ে, যাতে মাংসের আসল স্বাদ ফুটে ওঠে। এই খাবার শুধু পাকিস্তানেই নয়, এখন সারা বিশ্বেই পরিচিত। বিশেষ করে পাকিস্তানি ও আফগানি রেস্টুরেন্টে এটি অন্যতম জনপ্রিয় একটি পদ।

কেন খাবেন পেশোয়ারি মাংস?

  • অথেনটিক স্বাদ: খুব কম মসলাতেই তৈরি, তাই মাংসের আসল স্বাদ অটুট থাকে।
  • পুষ্টিকর: মাটন বা গরুর মাংস প্রোটিন, আয়রন ও ভিটামিনে ভরপুর।
  • সহজ রান্না: বেশি উপকরণ লাগে না, তাই নতুন রান্নার শিখছেন এমনদের জন্যও উপযুক্ত।
  • আনন্দের আয়োজন: ঈদ, পারিবারিক দাওয়াত বা বিশেষ অতিথি আপ্যায়নের জন্য উপযোগী।
  • বহুমুখী পরিবেশন: ভাত, নান, পোলাও, রুটি বা পরোটার সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।

উপকরণ (পেশোয়ারি ৪–৬ জনের জন্য)

  • মাটন/গরুর মাংস (হাড় চর্বিসহ) ১ কেজি
  • পেঁয়াজ – ৪টি আস্ত(মাঝারি আকারের)
  • রসুন  – ৪ আস্ত(মাঝারি আকারের)
  • আদা বাটা – ৩ ইনচি( স্লাইস করে কাটা)
  • গোলমরিচ আস্ত – ১ চা চামচ
  • লবণ – স্বাদমতো
  • তেল বা ঘি – টেবিল চামচ (ইচ্ছা)
  • ৪ টা নাগা মরিচ আস্ত (না থাকলে কাঁচা মরিচ ৬-৭)
  • পানি – পরিমাণ মত (মাংস সেদ্ধ হয়ে গেভি থাকে)
  • ৪ টা টমেটো আস্ত
  • ৪টি আস্ত আলু মাঝারি আকারের (ইচ্ছা)
  • ধনেপাতা – সাজানোর জন্য (ইচ্ছা)

রান্নার ধাপ:

১.মেরিনেট
কড়াই বা হাড়িতে মাংসের মধ্যে পরিমাণ মত লবণ দিয়ে ৩০ মি. মেরিনেট করে রাখতে হবে।

২. বাকি উপকরণ যোগ
বাকি উপকরণ যোগ করে ও যদি লবণ লাগে তাহলে আর একটু  লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।এখন চুলায় দিয়ে ৩-৪ মি. কষিয়ে নিন।

৩. পানি যোগ করে সেদ্ধ করা
এবার পানি ঢেলে দিন যেন মাংস ডুবে যায়। ঢাকনা দিয়ে কম আঁচে অন্তত২ঘণ্টা রান্না করুন (প্রেশার কুকার হলে ৩০ মিনিট যথেষ্ট)।মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে নেড়ে দিন ।

৪. ফাইনাল টাচ
যখন মাংস নরম হয়ে যাবে, তখন গ্রেভি ইচ্ছেমতো ঘন করুন। চাইলে শুকনা স্টাইলে নামিয়ে নিতে পারেন, নাহলে ঝোল রেখেও পরিবেশন করতে পারেন।

৫. পরিবেশন
উপরে ধনেপাতা ও আদা কুচি ছিটিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।


 পেশোয়ারি মাংস
পেশোয়ারি মাংস

পরিবেশনের আইডিয়া

  • নান, তন্দুরি রুটি বা গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
  • পাশে সালাদ, আচার বা দইয়ের রায়তা রাখতে পারেন।
  • ঈদ বা বিশেষ অতিথি আপ্যায়নে পোলাও বা বিরিয়ানির সঙ্গে পরিবেশন করুন।

ব্যবহার

  • পারিবারিক ভোজ: দাওয়াত বা উৎসবের টেবিল সাজাতে অপরিহার্য।
  • দৈনন্দিন খাবার: ভাত বা রুটির সঙ্গে নিয়মিত খাবার হিসেবেও উপভোগ্য।
  • রেস্টুরেন্ট মেন্যু: পাকিস্তানি রেস্টুরেন্টের অন্যতম জনপ্রিয় পদ।
  • সংস্কৃতির স্বাদ: পশতুন খাবারের স্বাদ জানতে হলে এই ডিশ একবার হলেও তৈরি করতেই হবে।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১:গরু বা মাটনের বদলে কি মুরগি ব্যবহার করা যাবে?
উত্তর: হ্যাঁ, তবে আসল স্বাদ আসে মাটন/গরুর মাংস থেকেই। মুরগি দিলে রান্নার সময় কম লাগবে।

প্রশ্ন ২: ফ্রিজে রেখে কয়দিন ভালো থাকবে?
উত্তর: বায়ুরোধী পাত্রে রেখে ২–৩ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যাবে।

প্রশ্ন ৩: কারি গোশতের সঙ্গে পার্থক্য কী?
উত্তর: কারি গোশতে অনেক বেশি মসলা  থাকে, কিন্তু পেশাওয়ারি গোশতে মসলা খুবই কম ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন ৪: রান্না দ্রুত করতে হলে কী করব?
উত্তর: প্রেশার কুকার ব্যবহার করতে পারেন, এতে সময় অর্ধেক কমে যাবে।


টিপস

  • মাংস হাড় চর্বিসহ নিন, এতে ঝোলের স্বাদ বাড়বে।
  • অল্প আঁচে ধীরে ধীরে রান্না করলে আসল স্বাদ পাওয়া যাবে।
  • উপরে আদা কুচি ও ধনেপাতা সাজালে সতেজ লাগবে।

পাকিস্তানি পেশোয়ারি মাংস
পাকিস্তানি পেশোয়ারি মাংস

উপসংহার

পেশোয়ারি  রোশ বা নমকিন, এটি পাকিস্তানের পশতুন সংস্কৃতির প্রতীক। অল্প কিছু মসলা, ধীর আঁচে রান্না আর মাংসের আসল স্বাদই এই খাবারের বৈশিষ্ট্য। পারিবারিক দাওয়াত, ঈদ বা বিশেষ অতিথি আপ্যায়ন – যেকোনো উপলক্ষেই এই খাবার টেবিলকে করে তোলে জমকালো। একবার খেলেই এর দুর্দান্ত স্বাদ আপনার মন জয় করবে।

One thought on “পেশোয়ারি মাংস রেসিপি!

Comments are closed.