ভূমিকা
ঈদ বা যেকোনো উৎসব মানেই যেন মিষ্টিমুখ! আর মিষ্টির তালিকায় যদি নবাবী সেমাই না থাকে, তবে আনন্দটা যেন অপূর্ণ থেকে যায়। এটি এমন এক বিশেষ ডেজার্ট বাস্পেশাল মিষ্টি! যা শুধুমাত্র দুধ, সেমাই আর চিনিতেই সীমাবদ্ধ নয়—এর মধ্যে লুকিয়ে থাকে খোয়া, জাফরান, কাজু-বাদাম আর ঘি’র এক অপূর্ব মিশ্রণ। আজ আমরা জানবো কীভাবে ঘরেই খুব সহজে তৈরি করবেন নবাবী সেমাই, যেটি খেলে মনে হবে আপনি কোনো নবাবি দাওয়াতে রয়েছেন।

নবাবী সেমাইয়ের উৎপত্তি
নবাবী সেমাইয়ের নাম শুনলেই বোঝা যায় এটি “নবাব” অর্থাৎ রাজবাড়ির কোনো বিশেষ খাবার। মুঘল আমলের নবাবরা ছিলেন বিলাসবহুল খাবারের অনুরাগী। তাঁদের দাওয়াতে সাধারণ সেমাই নয়, বিশেষ উপায়ে তৈরি ঘন দুধ, খোয়া, বাদাম, ঘি, এলাচ ও জাফরান দিয়ে তৈরিকৃত সেমাই পরিবেশন করা হতো। এই সেমাইই পরবর্তীতে “নবাবী সেমাই” নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।
কেন খাবেন নবাবী সেমাই?
- বিশেষ স্বাদ ও ঘ্রাণে ভরপুর
গুঁড়ো এলাচ ও জাফরানের সুবাসে সেমাইটি হয়ে ওঠে অন্য রকম। - উৎসবের আদর্শ মিষ্টান্ন
ঈদ, পূজা বা বিয়েতে বা কোন বিশেষ অনুষ্ঠানের অতিথি আপ্যায়নে অনন্য। - উপকরণ সহজলভ্য
বাড়িতেই থাকা উপাদান দিয়েই তৈরি করা যায়। - বাচ্চা থেকে বুড়ো—সবাই পছন্দ করে
হালকা ও ঘন দুধে তৈরি হওয়ায় এটি সহজে হজম হয়।
“নবাবী সেমাই রেসিপির উপকরণ ও প্রস্তুত প্রণালী”
মূল উপকরণ:
- চিকন লাচ্চা সেমাই – ২০০ গ্রাম
- ফুল ক্রীম দুধ – ১ লিটার
- খোয়া (মাওয়া) – ১৫০ গ্রাম
- ঘি – ৪ টেবিল চামচ
- চিনি – ১/২ কাপ (স্বাদ অনুযায়ী)
- কনডেন্সড মিল্ক – ২০০ মিলি (ঐচ্ছিক)
- এলাচ – ৪–৫টি
- তেজপাতা – ১টি
- জাফরান – সামান্য (গরম দুধে ভেজানো)
- গোলাপ জল – ১ চা চামচ
শুকনো ফল:
- কিসমিস – ২ টেবিল চামচ
- কাজু বাদাম – ২ টেবিল চামচ
- বাদাম কুচি – ২ টেবিল চামচ
- পেস্তা – ২ টেবিল চামচ

“নবাবী স্বাদের ঘরোয়া সেমাই রান্নার সহজ নিয়ম”ধাপে ধাপে
ধাপ ১: সেমাই ভাজা
১. একটি পাত্রে ২ টেবিল চামচ ঘি গরম করুন।
২. চিকন সেমাই দিয়ে হালকা বাদামি রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
৩. আলাদা করে রেখে দিন।
ধাপ ২: দুধ ফোটানো
১. বড় একটি পাতিলে দুধ ঢেলে মাঝারি আঁচে ফুটান।
২. এতে এলাচ ও তেজপাতা দিন।
৩. ১০–১৫ মিনিট ফুটিয়ে ঘন করুন। বারবার নেড়ে দিন।
ধাপ ৩: চিনি, খোয়া ও কনডেন্সড মিল্ক যোগ
১. ফুটন্ত দুধে চিনি দিন এবং নাড়তে থাকুন।
২. এরপর খোয়া হাতে চটকে মিশিয়ে দিন।
৩. ঐচ্ছিকভাবে কনডেন্সড মিল্ক যোগ করুন।
৪.জাফরান ভেজানো দুধ ও গোলাপ জল মেশান।
৫.৭–১০ মিনিট অল্প আঁচে রান্না করুন।
৬.ঘন ক্রিমের মত হলে এক পাশে রাখুন।
ধাপ ৫: বাদাম ভাজা ও স্তরে স্তরে সাজিয়ে পরিবেশন
১. ছোট কড়াইয়ে বাকি ঘি গরম করে কিসমিস, কাজু, পেস্তা ও বাদাম হালকা ভাজুন।
২.ছবিতে দেখানো ভাবে স্তরে স্তরে সাজান এবং উপরে ভাজা কিসমিস, কাজু, পেস্তা দিয়ে পরিবেশন করুন।
কিভাবে পরিবেশন করবেন?
- গরম গরম: সোনালি বাদামে সাজিয়ে গরম পরিবেশন করুন।
- ঠান্ডা করে: ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে পরিবেশন করুন – গ্রীষ্মকালে ঠিক।
- পরোটা বা লুচির সাথে: কিছু পরিবারে এটি পরোটা বা লুচির সাথে পরিবেশন করা হয়।
কবে কবে খেতে পারেন?
- ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহার দিনে
- বিয়ের অনুষ্ঠানে মিষ্টি পরিবেশন
- বিশেষ অতিথি আপ্যায়নে
- পরিবারের স্পেশাল উইকএন্ড ডিনারে
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
প্রশ্ন: খোয়া না থাকলে কী করবো?
উত্তর: কনডেন্সড মিল্ক অথবা মিল্ক পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
প্রশ্ন: সেমাই কি বেশি মিষ্টি হয়?
উত্তর: চিনি কম বা বেশি করা যাবে। কনডেন্সড মিল্ক দিলে চিনি একটু কম দিতে হবে।
প্রশ্ন: কতদিন রাখা যায়?
উত্তর: ফ্রিজে ২–৩ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। খাওয়ার আগে ওভেনে গরম করে নিন বা ঠান্ডা খান।
পারফেক্ট সেমাই তৈরির টিপস
- সবসময় ফুল ক্রীম দুধ ব্যবহার করুন।
- দুধ ফুটাতে দিয়ে নাড়তে থাকুন যাতে পাত্রে লেগে না যায়।
- জাফরান ও গোলাপ জল একেবারে শেষে মেশালে ঘ্রাণ ভালো থাকে।
- পরিবেশনের সময় চাইলে রূপালি পাতাও ব্যবহার করতে পারেন।

🔚 উপসংহার
নবাবী সেমাই শুধু একটা ডেজার্ট না—এটা আমাদের ঐতিহ্য, আবেগ আর সংস্কৃতির অংশ। ঘরে বসেই আপনি তৈরি করতে পারেন এই রাজকীয় স্বাদের সেমাই। চাইলেই উৎসব বা পরিবারের সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো আরও মধুর করে তুলুন এই দারুণ রেসিপির মাধ্যমে।আমার অনেক পছন্দ,আশা করি আপনারো পছন্দ হবে!
তাহলে আর দেরি কেন? আজই রান্নাঘরে ঢুকে বানিয়ে ফেলুন নবাবী সেমাই – রাজকীয় স্বাদের এক অসাধারণ উপহার।
নিচে ক্লিক করুন-